মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

হাসিনাকে কেনা যায়: খালেদা

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কেনা যায়’। এরশাদের কাছে ‘বিক্রি হয়ে’ তিনি একবার নির্বাচনে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীও জড়িত বলে মন্তব্য করেন তিনি।







সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে অনানুষ্ঠানিকভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বলেন, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে কেনা যায়।
র‌্যাব বাতিলের দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, এই বাহিনী শুধু বিএনপির ৩১০ জনকে হত্যা ও ৫৬ জনকে গুম করেছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের কথা উল্লেখ করে সাবেক এই বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘এই হত্যার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জড়িত, র‌্যাব জড়িত।’ তিনি র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘তাকে জেলে নিয়ে বিচার করতে হবে। সে কীভাবে এখনো পদে থাকে। জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, কেননা তাকে জেরা করলে অনেক খুনের কথা বের হয়ে আসবে। সরকার এ জন্য তার বিরুদ্ধে হাত লাগাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘র‌্যাব পচে গেছে, গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে। এটাকে ফেলে দিতে হবে। বাতিল করতে হবে।’
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে খালেদা জিয়া এই জনসভায় ভাষণ দেন। ২৭ সেপ্টেম্বর একই দাবিতে তিনি জামালপুরে জনসভায় ভাষণ দেবেন।


পালানোর পথ ঠিক করুন
খালেদা জিয়া বলেন, তিনি গ্রেপ্তারের ভয় পান না, জেলের ভয় পান না। সরকার যা-ই করুক তাঁর দল আছে, জনগণ আছে। তিনি শেখ হাসিনার উদ্দেশে বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তারের পর কী হবে তা চিন্তা¯করে রাখুন। আপনারা কীভাবে থাকবেন?’
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের এক বৈঠকে বলেন, প্রয়োজনে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হবে। আর গতকাল সোমবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশে করে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমাকে গ্রেপ্তারের আগে আপনারা নিজেদের পথ পরিষ্কার করে রাখেন। পাসপোর্টে ভিসাসহ যা যা লাগে নিয়ে রাখেন। তা না হলে পালানোর পথ পাবেন না।’ তিনি বলেন, এখনই পথ পরিষ্কার করতে না পারলে দেশের জনগণ, আলেম-ওলামারা পথ আট আটকে দেবেন। তখন আর পালানোর পথ পাবেন না।


সরকারকে খুন-গুমের জন্য জেলে যেতে হবে
আজকের সমাবেশে খালেদা জিয়া সরকারকে পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘এই সরকারের খুন, গুম ও দুর্নীতির সমস্ত তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে আছে। এগুলো প্রকাশ হলে তাদের কী হবে, তাদেরও জেলে যেতে হবে। শাস্তি পেতে হবে। হাসিনাও বহু অপরাধ করেছে।’ তিনি সরকারকে পরবর্তীকালে কী হবে সেই ‘চিন্তা করে রাখতে’ বলেন।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী ওই ঘটনার কয়েক দিন আগেই সুধাসদন থেকে মিন্টো রোডে যমুনায় ওঠেন। আবার সেখান থেকে চলে যান গণভবনে। মাঝে অল্প সময়ের জন্য যমুনায় ওঠা প্রমাণ করে প্রধানমন্ত্রী কিছু জানতেন।
সাবেক এই বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘গুম-খুন কি চলতেই থাকবে? সরকার কি অপকর্ম করতেই থাকবে?’ তিনি এর বিরুদ্ধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ঈদের পর যে কর্মসূচি দেওয়া তা পালনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে দেখিয়ে দিতে চাই জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।’


বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে রায় নেবে সরকার
বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে নেওয়া-সংক্রান্ত সংশোধনী বাতিলেরও দাবি জানান খালেদা। তিনি বলেন, ‘বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরাদের বিরুদ্ধে মামলার রায় নিজেদের মতো করে নিতে এই সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারপতিদের হাত-পা বেঁধে ফেলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এমনিতেই বিচার বিভাগ পুরোপুরি স্বাধীন না। আর এখন তারা যেভাবে চাইবে, সেভাবে রায় দিতে হবে। নয়তো বিচারপতিদের অপসারণ করা হবে।’ তিনি বলেন, এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে এক দিন হরতাল দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজন এক দিন হরতাল নয়, আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।


খালেদার জনসভার কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ
জনসভার কারণে নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয়ে আজ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, মাইকের শব্দের কারণে স্কুল ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়।
বেলা তিনটায় জনসভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের মধ্যে জনসভাস্থল জোটের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এরপর মাঠের সামনের সড়ক, পাশের রেললাইন ও আশপাশের ভবনের ছাদে দাঁড়িয়ে মানুষ খালেদা জিয়ার বক্তব্য শোনেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে শহরের প্রতিটি প্রবেশপথে তোরণ নির্মাণ করা হয়। শহরের পাশে খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমান ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত পোস্টার, ব্যানার টাঙানো হয়। অবশ্য ব্যানারে স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ছবিও ছিল। জনসভার কারণে দুপুর ১২টা থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল বিশ্বরোড মোড় থেকে শহরের কাউতলী মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার সড়কে যানজটের সৃস্টি হয়।
খালেদা জিয়া দুপুর ১২টার দিকে গুলশানে তাঁর বাসভবন থেকে জনসভায় যোগদানের উদ্দেশে রওনা হন। তাঁকে স্বাগত জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, নরসিংদীর বেলাব, সদর, ভৈরবসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা সড়কের পাশে অবস্থান করেন। খালেদা তাঁদের উদ্দেশে হাত নাড়ান। জনসভায় বক্তব্য দিয়ে রাতেই খালেদা জিয়া ঢাকায় নিজ বাসায় পৌঁছান।
জনসভায় সভাপতিত্বে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম। জনসভায় বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি আন্দালিব রহমান, খেলাফত মজলিসের সভাপতি মো. ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের সভাপতি আবদুল লতিফ নেজামী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাসসহ ২০-দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন