মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

গ্রেফতারে ভয় পাই না : খালেদা জিয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনসমুদ্রে খালেদা জিয়া : নিজের রাস্তা পরিষ্কার করে রাখুন পালাবার পথ পাবেন না; জামায়াত বিএনপির সাথে আছে বলে জঙ্গি, স্বাধীনতাবিরোধী; বেঈমান-মোনাফেকের সাথে ২০ দল যাবে না


মামলায় সাজা দিয়ে সরকার গ্রেফতার করতে পারে এরকম আশঙ্কা প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন  বিএনপি  চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। 
গতকাল বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এক বিশাল জনসভায় এই হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কখনোই গ্রেফতারে ভয় পাই না। আমি সরকারকে বলব, আমাকে বন্দী করার আগে নিজের রাস্তা পরিষ্কার করে রাখুন। নিজেদের পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে রাখুন। নইলে আলেম-উলামাসহ জনগণ এমনভাবে রাস্তায় সমবেত হবে, আপনারা পালানোর পথ পাবেন না।

 একই সাথে আবারো সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিচারপতিদের হাত-পা বেঁধে রাখতে ষোড়শ সংশোধনী পাস করা হয়েছে। এটা বাতিল করতে হবে। নইলে এই বাতিলের দাবিতে আমরা একদিন হরতাল দিয়েছি। এটাই শেষ নয়। প্রয়োজনে যেকোনো কর্মসূচি দিতে আমরা প্রস্তুত থাকব। ২০ দলীয় জোট ভাঙার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই জোট আরো শক্তিশালী হবে। মুনাফেক ও বেঈমানদের সাথে কেউ যাবে না। অবিলম্বে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, না হলে হরতালসহ আরো যেকোনো কর্মসূচি দেয়া হবে। জামায়াত বিএনপির সাথে থাকায় তাদেরকে জঙ্গি ও স্বাধীনতাবিরোধী বানানো হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। ঈদের পর সব আন্দোলন কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে মাঠে নামতে সবার প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন। 
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২০ দলীয় জোটের উদ্যোগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন এবং ষোড়শ সংশোধন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল, গুম-খুন-হত্যা বন্ধের দাবিতে এই জনসভা হয়। ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার এটি তৃতীয় জনসভা। সর্বশেষ গত ২৮ মে মুন্সীগঞ্জে খালেদা জিয়া জনসভা করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর, সরাইল, আশুগঞ্জ, আখাউড়া, নবীনগর, নাসিরনগর, বিজয়নগর, কসবা, বাঞ্ছরামপুরÑ এই ৯টি উপজেলা থেকে আসা হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে জনসভাটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা এই জনসভায় যোগ দেন। তাদের অনেকের হাতে ধানের শীষ প্রতীক, জিয়াউর রহমান, তারেক রহমান ও খালেদা জিয়ার বড় বড় প্রতিকৃতি ছিল। অনেক মিছিলে ব্যান্ড দলের উপস্থিতি নেতাকর্মীদের উৎসাহ জোগায়।

 নিয়াজ মুহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠ বেলা ৩টার মধ্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেলেও নেতাকর্মীরা কাউতলী, মেড্ডা, কাজীপাড়া, মধ্যপাড়া, বাদুবর, দোকনীঘাট, টিইরু, হালদারপাড়া প্রভৃতি সড়কে অবস্থান নেন। জনসভা উপলক্ষে শতাধিক মাইক স্থাপন করা হয়। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল ব্যাপক।
 বেলা ৩টায় কুরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে জনসভার কার্যক্রম শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় প্রধান অতিথি খালেদা জিয়া মঞ্চে এসে পৌঁছলে তুমুল করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান নেতাকর্মীরা। 
এর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রবেশপথ আশুগঞ্জ ব্রিজের কাছ থেকে সার্কিট হাউজ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়াকে করতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। ব্যানার-ফেস্টুন হাতে নেতাকর্মীদের পদচারণায় সবার মুখে ছিল একটাই সেøাগানÑ ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে।’ চারপাশে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি সংবলিত ডিজিটাল ব্যানার টাঙানো হয়। ছিল ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মরহুম মুফতি ফজলুল হক আমিনীর আলোকচিত্র।
বিএনপি চেয়ারপারসন তার ৪৫ মিনিটের ভাষণে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ২০ দলীয় জোট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সরকারের অপশাসন, দুর্নীতিসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন।
বর্তমান ‘অবৈধ-খুনি-জালেম’ সরকারকে হটাতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘ঈদের পর যে আহ্বান জানানো হবে, আপনারা তাতে সাড়া দেবেন। আমি স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, আমি যেখানেই থাকি, আমার দলে আছে, সবাই একসাথে আন্দোলনের জন্য কাজ করে যাবে।


খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো সরকার নেই। এখন যারা ক্ষমতায় আছে, তারা একটি অবৈধ সরকার। জনগণ তাদের ভোট দেয়নি। তারা (আওয়ামী লীগ) বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে একের পর এক আইন করছে। তারা দেশকে একদলীয় শাসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ সংসদে পাস হওয়া কোনো আইনের বৈধতা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়ার সরকারের ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনাÑ আমি গ্রেফতারে ভয় পাই না। ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনও আমাকে দেশ থেকে বের করে দিতে চেয়েছিল; কিন্তু তারা পারেনি। ওই সময়ে শেখ হাসিনা দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল। এখন তিনি (শেখ হাসিনা) বড় বড় কথা বলেন। তাই সরকার প্রধানকে বলব, আমাকে জেলখানায় যাওয়ার কিংবা মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দেয়ার ভয় দেখাবেন না।
জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপির সাথে আছে তাই জামায়াত ইসলামীকে খারাপ বলছে। এখন তাদের নানা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। তাদের কখনো জঙ্গি বানানো হচ্ছে কখনো বলা হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী। এই জামায়াতে ইসলামী এক সময় আওয়ামী লীগের সাথে ছিল। তখন তারা ছিল তাদের বন্ধু। জামায়াত ছিল তখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি।
জোটের ভাঙন নিয়ে সাম্প্রতিক প্রচারণার জবাবে জোটনেত্রী বলেন, বিএনপি জোট ভাঙবে না। এই জোট শক্তিশালী আছে, থাকবে। যারা দেশপ্রেমিক তারা বেঈমান, মুনাফেক ও দালালদের সাথে যেতে পারে না। দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষায় ২০ দলীয় জোট আগামীতে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।  
শেখ হাসিনাকে ছাড়া আওয়ামী লীগের সব নেতাকে টাকা দিয়ে কেনা যায় প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসিনা তো বহু আগেই বিক্রি হয়েছেন। ’৮৬ সালে এরশাদের সাথে আঁতাত করে তিনি টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছেন। ওই নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য আমরা সবাই চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। শেখ হাসিনা ওই নির্বাচনে গিয়ে জাতীয় বেঈমান খেতাব পেয়েছেন।
খুন-গুমের জন্য র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-এর আবারো বিলুপ্ত দাবি করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘র‌্যাব পচে গেছে। তাদের গ্যাঙ্গগ্রিন হয়েছে। এদের ফেলে দিতে হবে।
নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনসহ বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের দায়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের গ্রেফতার ও বিচার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের কর্নেল জিয়ার এখনো কিভাবে চাকরি থাকে। তাকে গ্রেফতার করে জেলখানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব কিছু বেরিয়ে যাবে। এই ভয়ে তাকে সরকার গ্রেফতার করছে না।
পুলিশের সাথে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে বলব, আপনারা সবার সাথে নিরপেক্ষ ব্যবহার করুন। ছাত্রলীগ-যুবলীগকে পাহারা দেয়ার দায়িত্ব আপনাদের নয়। আমি বলব, আপনারা আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল-মিটিংয়ের ওপর গুলিবর্ষণ করবেন না।
গুম-খুনের বিরুদ্ধে জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বলতে চাই, দেশে যেভাবে গুম-খুন হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা প্রস্তুত আছি। জনগণকেও প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কর্মসংস্থানের অভাব, বিনিয়োগ হ্রাস প্রভৃতি বিষয়ে সরকারের চরম ব্যর্থতা তুলে ধরেন।
বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের নামে সরকারের লুটপাটের কাহিনী তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, ‘কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের নামে ২০০৯ সাল থেকে সরকার ১৭ হাজার কোটি টাকা ভুর্তকি দিয়েছে। কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়েনি। তারা প্রচার করে বেড়ায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এটা মিথ্যা তথ্য। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ছয় হাজার মেগাওয়াট।’

বিদ্যুতের লোডশেডিং চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এক দিকে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়েই চলেছে, অন্য দিকে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে।
বিদ্যুতের কথা বলে আশুগঞ্জ সার কারখানা বন্ধ রেখে বিদেশ থেকে সার আমদানির নামে কমিশন নেয়া হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
মসজিদ-মন্দির-গির্জার  সংস্কারের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ লুটপাট করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, টেলিভিশনের সংবাদে দেখলাম, মসজিদ-মাদরাসা-মন্দির-গির্জার নামে যেসব অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তা সরকারের লোকজন খেয়ে ফেলেছে। আলেম-এতিমদের টাকা তারা খেয়ে ফেলছে। যেখানেই টাকা সেখানেই তাদের হাত। টাকা দেখলে তারা লোভ সামলাতে পারে না।
তিনি বলেন,  ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অর্থ যাচ্ছে কোথায়? রাস্তাঘাটের কী বেহাল অবস্থা। ওদের একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নাম হাঁটিহাঁটি খাই খাই। কারণ এই দলটি হলো যা পাই , তাই খাই। নদী-খাল-বিল যা ইচ্ছে দখল করে খাচ্ছে। 
আর্থিক খাতে এক লাখ ৯৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার পরিসংখ্যান তুলে ধরে খালেদা জিয়া বলেন, পুঁজিবাজার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, হলমার্ক, ডেসটিনিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের অব্যবস্থাপনা ও দলীয়করণের বিষয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন সে জন্য আমি অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ আওয়ামী লীগ কখনোই সত্য কথা বলে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছেÑ এই একটি সত্য কথা বলার  জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
দেশের দুরবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য আজ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কর্মসংস্থান কমে গেছে। দেশে বিনিয়োগ বন্ধ। গ্যাস পানি বিদ্যুতের কারণে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ সরকারের সময় কেউ এই দেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। 
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা দেশকে বালোবাসেন। আপানারা মুসলমান। এ দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি আপনাদের কর্তব্য রয়েছে। ছাত্র যুবক, মা বোন আলেম ওলামা সবায় আসুন এই জালেম মিথ্যাবাদী হত্যাকারী খুনি এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করি।  এদেশ আমাদের সবার, সব ধর্মের।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা কথায় কথায় মিথ্যা কথা বলেন। কিন্তু আমরা ঈমানদার। সব সময় নামাজ পড়ি। আল্লাহকে ভয় করি। তাদের পরকালের কোনো ভয় নেই। এ জন্য তারা মিথ্যা কথা বলেন এবং মানুষ মারেন। দুনিয়াতে তাদের অবস্থা যাই হোক পরকালে তাদের যে কি হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ  জানে না। দেশকে ফোকলা করে তারা সবাই চলে যাবে। কেউ দেশে থাকবে না।
ঈদের পর থেকে সব আন্দোলন কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে মাঠে নামার আহ্বান জানান তিনি।
২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযানের কঠোর সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আলেম-উলামা-এতিমদের হাতে সে দিন জায়নামাজ, তসবিহ ও কুরআন শরীফ ছিল। তাদের হাতে কোনো অস্ত্র ছিল না। অথচ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে বহু আলেম-এতিমকে হত্যা করা হয়েছে। কুরআন শরীফ পোড়ানো হয়েছে। অনেক আলেম-এতিমের বডি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে উল্লেখ করে জোটনেত্রী বলেন, ‘মাওলানা ফজলুল হক আমিনী দেশপ্রেমিক আলেম ছিলেন। তাকে দীর্ঘ দিন গৃহের বাইরে যেতে দেয়া হয়নি। তিনি মনোকষ্টে মারা গেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘এদের হাতে সাধারণ জনগণ, বিডিআরের ৫৭ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, আলেম-এতিমদের রক্ত। এরাই (আওয়ামী লীগ) আবার আপনাদের কাছে হিজাব পরে তসবিহ হাতে ভোট চাইতে আসবেন। তাদের ক্ষমা করবেন না।


ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো: শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জহিরুল হক খোকনের পরিচালনায় ওই জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, বিএনপি ঢাকা মহানগর সভাপতি মির্জা আব্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা অধ্যক্ষ মো: ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ নেজামী, জাগপার চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত আমিনী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অব: মেজর জেনারেল সৈয়দ মো: ইবরাহীম বীরপ্রতীক, এলডিপির কেন্দ্রীয় মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও শওকত মাহমুদ, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মুর্তাজা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বিজেপির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলহাজ সেলিম মাস্টার, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ, খেলাফত আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ গোলাম আকবর, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির জুনায়েদ আল হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মো: শাহজাহান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ আব্দুর রব, জমিয়তে ওলামায়ে কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মাওলানা জহিরুল ইসলাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান, হাজী সিরাজুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা শাহীন আহমেদ খান, স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান মন্জু, বিএনপি সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক আলী আজম, বিএনপি নেতা মোমিনুল হক, মো: আজিম, শ্রমিক দলের হেবজুল বারী, সাবেক ভিপি আবু শামীম মো: আরিফ, জামায়াতে ইসলামী জেলা শাখার সেক্রেটারি কাজী ইয়াকুব আলী, পৌর শাখার সেক্রেটারি অধ্যাপক জুনায়েদ হাসান, জেলা বিএনপি নেতা দেওয়ান নাজমুল হুদা, শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক বাহার চৌধুরী,  জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মুনির হোসেন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শামীম মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মাহমুদ, ছাত্রশিবির নেতা সোহরাবুর রহমান নিপু, ছাত্রদলের শেখ হাফিজুল্লাহসহ স্থানীয় ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ। 
জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়া, সাবেক এমপি আব্দুল খালেক, সাবেক এমপি আলহাজ কাজী আনোয়ার হোসেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানসহ ২০ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জনসভায় উপস্থিত ছিলেন। 
 খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানাতে পথে পথে নেতাকর্মীর ঢল
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সমাবেশে যাওয়ার পথে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জের ভুলতা এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী অবস্থান নেন। দুপুর দেড়টায় ভুলতা এলাকা অতিক্রম করার সময় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান ভুঁইয়া দিপুর সমর্থক হাজার হাজার নেতাকর্মী মহাসড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড হাতে বেগম খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়াও রূপগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি গোলাম ফারুক খোকন, তারাব পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফজাল কবির, কাঞ্চন পৌর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মফিকুল ইসলাম খান, দেলোয়ার হোসেন, নাসিম, রজব আলী ফকির, গোলজার হোসেন, আব্দুল মজিদ ভুঁইয়া, কালাম, ছাত্রদল নেতা ভিপি তারিক, সালাহউদ্দিন দেওয়ান, রফিকুল ইসলাম, আলতাফ হোসেন, নাজমুল হাসান, রাকিব, আরিফ, রাজিব, জাকির, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল নেতা আনোয়ার সাদাত সায়েম, রুহুল আমিনের নেতৃত্বে পৃথক মিছিল নিয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের স্থানে স্থানে জড়ো হয়ে বেগম খালেদা জিয়া ও তার সফরসঙ্গীদের শুভেচ্ছা জানান। 
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, বি-বাড়িয়ায় সমাবেশে যাওয়ার পথে গতকাল বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা ১টায় বেগম জিয়াকে বহনকারী গাড়িবহর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা দিয়ে শিমরাইল মোড় হয়ে কাঁচপুর এলাকা অতিক্রম করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বাবুল, মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল হোসেন, থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাছান শরীফ, থানা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হেসেন ও বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন প্রমুখ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন